মূল্যবান সজ্জা

মূল্যবান সজ্জা
-চিন্ময় মহান্তী

 

 

ঢাক কাঁধে সাইকেল চালিয়ে পাড়ায় ঢুকলো ঢাকি ।
মেয়েটা খেলছিল রাস্তায় , ঢাকি দেখেই ছুটে এলো ঘরে ;
বাবাকে জড়িয়ে ধরে —–
আদুরে গলায় বলল , ‘ বাবা , তুমি দিলে ফাঁকি ! ‘

বাবার কন্ঠ রুদ্ধ হলো । চোখ দুটি পেলো চরম লজ্জা ।
খুকুর পুজোর ফ্রক এখনো কেনা বাকি ;
মাসাবধি ঝুলছে কারখানায় নোটিস । অনির্দিষ্টকালীন বন্ধ ।
বাবা মেয়েকে বলল , ‘ আদর দিয়েছি মা। একি কম সজ্জা!’

অষ্টমীর ঢাকে কাঠি পড়লো । মেয়েটা তাকালো বাবার দিকে।
‘ বাবা –বাবা ! তোমার চোখে জল কেন বাবা ? ‘
‘ তোর ফ্রকটা এখনো যে দোকানেই মা ! ‘
‘ তাতে কি হয়েছে বাবা । না বাবা -না । পুজোতো হয়নি ফিঁকে । ‘

নবমীর দিনে মেয়েটা বাবার সঙ্গে হাত ধরে প্যান্ডেলে গেল ।
চারিদিকে আলো । নতুন পোশাকের গন্ধ ।
চাইনিজ মেনুর রেস্তোরা গুলো ভিড়ে গাদাগাদি । মেয়েটা সব দেখল ।
বাবার হাত ধরে টানতে টানতে একটা ঘুগ্নির দোকানে গেল ।

দশমী এলো । মেয়েটার চোখে জল ।
বাবা শুধায় , ‘ কাঁদিস কেন মা ? চারিদিকে কত বাজির শব্দ । ‘
‘ বাবা । মা যে চলে যাচ্ছে , আমাকে ছেড়ে !
সেই জন্মকালে যেমন গিয়েছিল আমায় ছেড়ে ! ‘
বাবা চোখ মুছে বলল , ‘ কি করবি মা বল ! ‘

মা চলল । সবাই পিছু পিছু চলল , কলরব -বোলে ।
মেয়েটা দরজায় দাঁড়িয়ে বলল , ‘ তুই যখন আসবি মা , সামনের বছর ।
দেখবি আমি অনেকটা বড় হয়েছি । আর একটা নতুন ফ্রকও পরেছি ।
শুধু দেখিস মা যেন বাবার কারখানাটা খোলে । ‘

মেয়েটার প্রার্থনা শুনে বাবা ভাবে —
আমি নতুন একটা ফ্রক কিনে দিতে পারিনি ঠিকই ,
কিন্তু ব্যথায় সমব্যথী হতে শেখাতে পেরেছি ।
এটাই তো ওর জীবনে চলার মূল্যবান সজ্জা হবে ,
ফ্রক , সেতো অচিরেই ছিঁড়ে যাবে ।

Loading

One thought on “মূল্যবান সজ্জা

Leave A Comment